ও পাগলা তোর পাগলি কই’এ রকম  প্রবাদে সে সময় উত্তেজিত করা হত  আমাদের এলাকার বেশ কয়েকজন পাগলকে।এর মধ্যে জিঞ্জির পাগলা,আমিনুদ্দিন লুলা,হাইস্সা পাগলা ও মাইগ্গা পাগলা।জিঞ্জির পাগলার কথা আমার স্বরণ নেই তার একটি কবর ছিলো মন্তাজ মাদবরের বাড়ীর রোডের পাশে।আমার চোখে দেখা কবরটি ছিলো দীর্ঘকাল যা এখন নগরায়ণের চিহ্নহীন।হাইস্সা পাগলাকেও দেখিনি তবে শুনেছি সে অত্যান্ত নম্ভ্র স্বভাবের ছিলেন।তবে তার মাকে দেখেছি যিনি ওমর পুর শাহী জামে মসজিদের বিশাল অযু করার পানির মটকি ভরে রাখতেন দিন রাত চব্বিশ ঘন্টাই।তখন মটরের পানি ছিলো না সর্বোত্র ছিলো  নির্মল চাপ কলের পানি।সেই চাপ কল চেপে ফিফটির্ধো একজন বয়স্ক মহিলা মসজিদে নমাজে আসা মুসুল্লিদের অযু করার পানি তিনি একাই যোগান দিতেন তার পৃথিবী বিয়োগে আগ পর্যন্ত।তিনি মসজিদটির নামে সম্ভবত তার এক শতাংশ জায়গাও লিখে দিয়েছিলেন।দান করা এই এক শতাংশ জায়গা নিয়েও ক্ষমতাসীনদের সাথে মসজিদ কমিটিদের ঘটেছিল তিক্ত ঘটনা।

আমার জীবনে একজন পাগলাকেই দেখেছি খুব কাছে থেকে।ছোট খাটো লোকটিকে যখনি কেউ মাইগ্গা পাগলা বলতো তখন সে রেগে কাছে যা পেতেন তাই ছুড়ে মারতেন।সে আমাকে খুব আদর করত।তার বাসস্থান বা ঘর ছিলো প্রথমে রহিজউদ্দিনের বাড়ীর পিছনে মরে যাওয়া কংশ নদীর কিনারায়।এরপর ঘর বাধে বা থাকার ঘর তৈরী করেন সিরাজ বা আব্দুল্লাদের বাড়ীর পিছনে কংশ নদীর কিনারায়।তার ঘরটি অন্য সব সাধারন মানুষের মতন ছিলো না।সে পরিত্যাক্ত টিন লোহা বাশ কাঠ ইত্যাদি কিছুনা কিছু বস্তু টুকায়ে এনে বাবুই বা কাকেরা যে ভাবে বাসা তৈরী করে ঠিক সে ভাবে তার ঘরকে দিনকে দিন মজবুত করতেন।তার ঘরটির উচ্চতা ছিলো প্রায় তার বুক সমান।আর দরজার উচ্চতা ছিলো কোমরের নীচে।সে ঘুমাতেন বিশাল স্কোয়ার জায়গা নিয়ে ঘরের এক কোনায়।তার ঘুমাবার বিছানা ছিলো একটি ট্রাক বা বাসের টায়ারের মধ্য ভাগের শুণ্যস্থানে তিন মাথাকে এক করে।বিবাহ বন্ধন ছেলে সন্তানহীন তার ঘরে সে ছাড়াও বসবাস করত রাতের অতিথি সব জাতের সাপ,বড় বড় ব্যাঙ,বিভিন্ন প্রজাতির বিচ্ছু,ব্যাজি,শিয়াল কুকুর।সম্ভবত তার ঘরটির প্রসস্ত করেছিলেন এ সব জীব জন্তুর নিশ্চিন্তে বসবাসের জন্য।প্রত্যহ সে ফজর নামাজের সময় ঘুম থেকে উঠতেন।নামাজ পড়া খাওয়া দাওয়া সবিই ঐ ট্রাকের টায়ারে বসেই করতেন।এক দিন রাত ফুরিয়ে সকালের সূর্যের ত্যাজের তীব্রতা বাড়তে থাকে তার ঘুম ভাঙ্গেনি।বাহির হতে ডাকা ডাকিতেও কোন সাড়া মেলেনি।ভিতরে প্রবেশ করে দেখা গেল অন্ধকারাছন্ন ঘরটিতে ট্রাকের টায়ারের মধ্যখানে পশ্চিম মুখে তিন মাথা এক করে চির নিদ্রায় শায়িত।

বর্তমানে সিরাজ স্বর্নালয়ের দোকানটির স্থলে এমপি বাড়ীর রাস্তার প্রায় অপজিটে ছিলো কাঠের মাচার দোকানপাট।সম্ভবত আশি শতকের কথা সেই কাঠের মাচার দোকানের নীচে বসবাস করত অজানা এক ফুটফুটে বোবা কন্যা শিশু।এখানেই তার বেড়ে উঠা।মুখে শব্দহীন অভিবাবকহীন এই কন্যা শিশুটির বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে তার সৌন্দর্যময় দেহের গঠন প্রনালীর আকৃষ্টতা যা সে সময় কাল হয়ে ধারায়।মেয়েটিকে কম বেশ সবাই আদর করত মায়া করত তার খোজ খবর নিতেন।এক সময় দেখা গেল ছোট্র এই বোবা মেয়েটির ঘর আলো করে এলো আরেক অপ্রত্যাশিত শিশু যা আমাদের কাম্য নয়।কে বা কারা যেন তার সর্বনাস করে ।ঘৃনিত কাম চতুর অমানুষটি ভাবলো না কাজটি কি সে ঠিক করল!একেতো বোবা তার উপর অভিবাবকহীন পরিচয়হীন এক অসহায় এতিম মেয়ে।বিবেকহীন সমাজের বিবেকবানরা একবার তা খতিয়ে দেখে বোবা মেয়েটির একটি সু ব্যাবস্থার চিন্তা করেননি।সে সময় তার বসবাসের নিকটবর্তীই ছিলো ক্ষমতাধর ব্যাক্তিদের বসবাস।জগতের সব মা ই সন্তানকে অতি যতনে রাখেন সেও তার যে ভাবেই হউক আগত সন্তানকে বুকে আগলে রাখতেন অতি যতনে সতর্কতায়।সে সময়কার স্মৃতি কিছুটা অস্পষ্ট ভাবে মনে পড়ে।কেউ যখন ঠাট্ট্রা করে তার সন্তানকে কেড়ে নিতে চাইত তখন তার জীবনে না কাটা নখে বাঘের ন্যায় আচড় বসিয়ে দিতে থাবা দিতো।এক সময় শিশুটি আমার স্মৃতিতে অপুষ্টিতায় মারা যায় এবং সেই শোকে এক সময় সেও হারিয়ে যায় কোন এক অজানাতে।
আগের লেখায় আমি সিদ্ধিরগঞ্জ রেবতী মোহন পালট হাই স্কুলের কথা স্বপ্লাকারে বনর্না করেছিলাম।আলোচনায় তুলে ধরেছিলাম স্কুলটির জমি দাতার কথাও।বহুকাল পর তাদের বংশধর ভুবন এর পরিবারের সাথে কলকাতায় গিয়ে দেখা করেন আমাদের এ অঞ্চলের সিদ্ধিরগঞ্জের প্রথম চেয়ারম্যান পরলোকগত আলহাজ্ব আমিজউদ্দিন সাহেবের বংশধর,সমাজ সেবক,রাজনিতীবিদ,সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার প্রথম প্রশাষক,ভাই ভাই ফিল্মস ও হোটেল ৭১ এর কর্ণধার আলহাজ্জ্ব মোহাম্মদ আব্দুল মতিন প্রধান ও রাখী টেক্সটাইল,রাসন,ওল্ড টাউন ফ্যাশন লিঃ,এবং অত্র অঞ্চলে রোটারী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব।তারা দুজনেই আমাদের অঞ্চলে এক একজন ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক জীবন উন্নয়নে নিবেদিত প্রান।রিসেনলি তারা কলকাতায় গিয়ে খুজে বের করেন স্কুলটির জমি দাতার বংশধরদের।তাদের সাথে আলোচনা করেন স্কুলটির বর্তমান,ভবিষৎ কর্ম পরিকল্পনা।আমরা কৃতজ্ঞ এই দুই জন ব্যাক্তির নিকট।তাদের  জন্য স্কুলটির প্রতিষ্টিত হওয়ার এতো কাল পর হলেও আমরা দানকৃত জমির মালিক সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ হতে জ্ঞাত হলাম।আমরা এটাও আশা করব তারা যেন কোন এক উৎসবে কলকাতা হতে স্কুলটির পরিদর্শন ও সন্মাননা জানাতে তাদেরকে আসতে আমন্ত্রণ জানাবেন।কেননা আমাদের অনেকের একটি ভ্রান্ত ধারনা ছিলো এ স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা এখানকার আরেক প্রভাবশালী সমাজ সেবক ও তুখোর রাজনিতীবিদের।সচারচর তার বক্তিতায় বা স্কুলটির বিশেষ কোন আয়োজনে কখনোই ভুবনদের বংশধর এ জমির দানবীরের নাম পরিচিতি স্পষ্ট ভাবে বলেননি বা শুনিনি।তবে সত্যি যে এ নিঃস্বার্থ সমাজ সেবক ও সে সময়কার তার সহযোগিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে আজকের এ রেবতী মোহন হাই স্কুল এন্ড কলেজের উৎপত্তি।সে জন্য তার লিডারশীপের উপর আমরা নিঃশন্দেহে কৃতজ্ঞ।

চলবে..

সিরিয়াল ০৩ পর্ব

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ