আমি জানিনা, এটা ব্লগে দেবার মত পোস্ট কিনা, তবু দিলাম।মনে হল এখানে একটা ম্যাসেজ আছে দেবার মত,তাই শেয়ার করলাম।

#ব্যাক্তিগত
অন্তর্জালে সাধারনত ব্যাক্তিগত কথা কমই বলি/লিখি। তবে আমি যত যাই লিখি অনেকেই তার সবকিছুই আমার আত্নজীবনী ভেবে ভুল করেন।তাদেরকে বলি, সেসব কথা মূলত আমার নিজের কথা নয়, বেশিরভাগই চারপাশের অসংখ্য মানুষের জীবনগাঁথা, যা আমি সাজিয়ে গুছিয়ে কিছুটা কল্পনা মিশিয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরি। যাই হোক, আজ লিখছি নিজের মনে জমে থাকা কিছু কথা।

বাবার সরকারী চাকরির সুবাদে বহুবার আমাকে বহু স্কুল পাল্টাতে হয়েছে।ফলে, নতুন পরিবেশের বৈরীতার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার অভ্যেস আমার ছিল। তো, কোন এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচয় হয় খুব সাজুগোজু টাইপের কোন মেয়ের সাথে। আমি আবার সুন্দর কিছু দেখলেই প্রশংসা করি। তাই তার সাজগোজেরো প্রশংসা করলাম। তাদের পুরো গ্রুপটার সাথেই পরিচয় হল। প্রায়ই একসাথে আড্ডা হত। তো আড্ডায় বসলেই সাজুনী মেয়েটা আমাকে খুব পঁচাতো! আমার অতি সাধারন পোশাক, ফ্যাশন বিহীন সাদাসিধে চুলবাঁধা, মাথায় ওড়না দেয়া, একটু লুজ পোশাক পরা এবং খুব সাধারন চলাফেরা ইত্যাদি নিয়ে সবার সামনে পচাতো! খুব রাগ হত,কিন্তু এসব খোঁচার কি পাল্টা জবাব দিতে হয় তা আমার স্বল্প বুদ্ধিতে কুলোতো না, চিরকালই এদিক থেকে আমি খুব বোকাসোকা ছিলাম, আছি। কখনোই কাওকে অযথা খোঁচা মারা,কথা শোনানোর বুদ্ধি বা রুচি কোনটাই আমার হয় না। আবার এসব শুনতেও ভাল লাগত না।তাদের গ্রুপটা আবার পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকত। নানা সময় আমার কাছ থেকে নানাভাবে সুবিধা নেবার চেষ্টা করত,নিয়েও থাকত! এমনকি আমার প্রতিটি বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করত। কিছু খেতে গেলে তাকিয়ে থাকত মুখের দিকে, আমি কি করে চিবোই,কি করে খাই, সেটাও তাদের কাছে বিনোদনের বিষয়! এতকিছুর পরেও
আমি ফার্স্টগার্ল থাকায় পড়ার ব্যপারে আমার কাছেই আসতো। শত অপমান করলেও পড়ার ব্যপারে সাহায্য চাইলে ফিরিয়ে দিতাম না। সাধ্যমত সাহায্য করতাম।
.
আমি আজীবন সাদাসিধে জীবন যাপন করেছি। এত এত গয়না,লিপস্টিক, জামা, জুতা কেনার চেয়ে কটা বই কেনা আমার কাছে শ্রেয় মনে হত। হাতে টাকা হলে তাই দিয়ে আরো নানাকিছু কিছু করতাম বা করি, তা নাইবা বললাম। আর হ্যাঁ, আমি আজীবন সাজগোজ করে রঙ মেখে লোককে দেখানোর চেয়ে নিজের পড়াশোনা, কাজ ইত্যাদিকেই প্রাধান্য দিয়েছি (যদিও আহামরি কোন রেজাল্ট করিনি। কোনমতে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাসটা ধরে রেখেছি। সবাই বলে ইংরেজিতে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া নাকি সহজ কথা নয়।)

যাই হোক, বলছিলাম মেয়েটার কথা! তো সে হঠাৎ পড়াশোনা ছেড়ে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল। তাকে খোঁজার অনেক চেষ্টা করলাম।কিন্তু সে যোগাযোগ করল না।তারপর অনেক বছর পেরিয়ে গেল। হঠাৎ মেয়েটি একদিন আমার কাছে এল। এসে বলল,সে আবার পড়াশোনা শুরু করবে। আমি যেন তাকে আগের ক্লাসের পড়াগুলো পড়াই।আমিই তার একমাত্র ভরসা। তখন আমার জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ কোন পরীক্ষা ছিল সামনে।দম ফালানোর মতও সময় ছিল না। আর যখন সে আমার সামনে এল, সকল কথাগুলো আমার মনে পড়ে গেল।অত বেশি মহানও হতে পারলাম না, নিজের পড়া বাদ দিয়ে তাকে পড়ানোর জন্য উদার হতে পারলাম না।

তবে তার ব্যপারে যদি এত সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতা আমার না থাকত,বরং তার বিপরীতটা হত,তবে কাহিনীটা অন্যরকম হতে পারত।

(একটা মেয়ের ঘটনাতে আবার সকল মেয়েকে খারাপ বলে বসবেন না যেন।আশা করি, কোন মেয়ের ত্রুটিকে কোন একজন মানুষের ত্রুটি হিসেবে দেখবেন, দুনিয়াশুদ্ধ সকল মেয়ের ত্রুটি হিসেবে নয়।)

বলা যায় না,কখন কার কেমন দিন আসে!
অহেতুক মানুষকে অপমান করতে নেই।
মানুষ অন্যকে সম্মান করলেই নিজে সম্মান পেতে পারে।

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ