1.1
খুব প্রচলিত একটি কথা এই,বিগত ৪৩ বছরেও ১৯৭১ এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতাকারী রাজাকার আলবদর আলসামসদের অপরাধের কেউ বিচার করেনি।শাহাবাগ গনজাগরন মঞ্চেও এই কথাটি খুব বলিষ্ঠ ভাবেই উচ্চারিত হয়েছে।গনজাগরন মঞ্চের এই উচ্চারণটি ও ইতিহাস বিকৃতির নামান্তর।ধারণাটি এমন হওয়া উচিৎ ছিল ‘৭৫ এ থেমে যাওয়া বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে হবে,সাজাপ্রাপ্তদের যাদেরকে ৭৫ এর সামরিক অধ্যাদেশের বলে মুক্তি দেয়া হয়েছিল তাদের গ্রেফতার করে সাজা কার্যকর করতে হবে এবং ওই সময়ে অভিযুক্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে কেউ বাদ পরে থাকলে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’'

বর্তমান প্রজন্ম যা জানে না তা হচ্ছে,
* ১৯৭২ সনের ২৪ জানুয়ারি দালাল আইন বিশেষ ট্রাইবুনাল আদেশ জারী করা হয়।
এই দালাল আইনের আলোকে সর্ব মোট ৩৭ হাজারের বেশী মানুষকে আটক করা হয়।
*সমস্ত দেশে ৭৩ টি বিশেষ আদালতে এদের অপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
*১৯৭৩ সনের ৩০ নভেম্ভর দালাল আইনে যে সমস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুস্পস্ট অভিযোগ পাওয়া যায়নি,তাঁদের জন্য সরকার সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করে। এ ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক ৩৭ হাজারের অধিক ব্যক্তির ভেতর থেকে ২৫ হাজার ৭১৯ জন আসামি ছাড়া পায় ।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার ৫ নং ধারায় বলা হয়, ‘যারা বর্ণিত আদেশের নিচের বর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব ক’টি অভিযোগ থাকবে।
ধারাগুলো হলো:
১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো অথবা চালানোর চেষ্টা),
১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র),
১২৮ ক (রাষ্ট্রদ্রোহিতা),
৩০২ (হত্যা),
৩০৪ (হত্যার চেষ্টা),
৩৬৩ (অপহরণ),
৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ)
৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ),
৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা),
৩৭৬ (ধর্ষণ),
৩৯২ (দস্যুবৃত্তি),
৩৯৪ (দস্যুবৃত্তিকালে আঘাত),
৩৯৫ (ডাকাতি),
৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি),
৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি),
৪৩৫ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন),
৪৩৬ (বাড়িঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার), ফৌজদারি দণ্ডবিধির
৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে কোন জলযানের ক্ষতিসাধন) অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান।
এসব অপরাধী কোনোভাবেই ক্ষমার যোগ্য নন।’
এই ক্ষমাকে বিএনপি এবং রাজাকাররা সাধারন ক্ষমা হিসেবে প্রচার করে এবং দীর্ঘ বছর এই মিথ্যে প্রচারটি প্রাচারিত হতে থাকায় এটি প্রায় গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়। ক্ষমা ঘোষণার পরেও ১১ হাজার আসামী যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ ছিল , তাদের মামলা গুলো চলতে থাকে ।
* ৭৩ সন পর্যন্ত ৭৫২ জন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসী,যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয়।
* ১৯৭৫ এর ৩১ ডিসেম্বর জেনারেল জিয়া সামরিক অধ্যাদেশ জারী করে দালাল আইন বাতিল করেন। থেমে যায় যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম। আটক ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে দেয়া হয়। দন্ডিত যুদ্ধাপরাধী ৭৫২ জনের সাজা মওকুফ করা না হলেও কোন কিছু তোয়াক্কা না করে এদেরকেও মুক্ত করে দেয়া হয়।

একথা সুস্পষ্ট ভাবেই বলা যায় যে,১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান ছিল,যা ৭৫ এর পটপরিবর্তনের পরে বন্ধ করে দেয়া হয়।দেশকে উল্টো স্রোতে পরিচালিত করা হয়। স্বাধীনতার পরে এদের বিচার করা হয়নি,এই প্রচলিত কথা সর্বাত্মক মিথ্যে প্রচারণা।

মুক্তিযুদ্ধের গবেষক এ এস এম সামছুল আরেফিন এর লিখিত মুক্তিযুদ্ধ'৭১- দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী  বইতে সমস্ত সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের নাম ও অপরাধের বিবরন আছে। বইটি আমার সংগ্রহে থাকলেও কিভাবে যেন তা হারিয়ে ফেলি।বহু কষ্টে বইটি আবার সংগ্রহ করেছি বিধায় এখন এ বিষয়ে লিখতে পেরেছি।

ধীরে ধীরে জানুন কোন কোন যুদ্ধাপরাধীর সাজা হয়েছিল।হয়ত সে আপনার আশে পাশেই আছে লুকিয়ে। এই ঘৃণিত অপরাধীকে চিনিয়ে দিন বর্তমান প্রজন্মকে।

1
2
3
4

0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ