iDxJmGLYdGEv

একদল লোককে দেখেছি দাঙ্গাহাঙ্গামার ধার ধারে না। দোকান ভাঙছে, লুট করছে, আর কোনো কাজ নাই। একজনকে বাধা দিতে যেয়ে বিপদে পড়েছিলাম। আমাকে আক্রমণ করে বসেছিল। কারফিউ জারি হয়েছে, রাতে কোথাও যাবার উপায় নাই। সন্ধ্যার পরে কোন লোক রাস্তায় বের হলে আর রক্ষা নাই। কোন কথা নাই, দেখামাত্র শুধু গুলি। মিলিটারি গুলি করে মেরে ফেলে দেয়। এমনকি জানালা খোলা থাকলেও গুলি করে। ভোরবেলা দেখা যেত অনেক লোক রাস্তায় গুলি খেয়ে মরে পড়ে আছে। কোনো কথা নেই শুধু গুলি।

একবার আমার ও সিলেটের মোয়াজ্জেম চৌধুরীর (এখন কনভেনশন মুসলিম লীগের এমএনএ) উপর ভার পড়েছে রাতে পার্ক সার্কাস ও বালিগঞ্জের মাঝে একটা মুসলমান বস্তি আছে– প্রত্যেক রাতেই হিন্দুরা সেখানে আক্রমণ করে– তাদের পাহারা দেওয়ার জন্য। কারণ, বন্দুক চালানোর লোকের নাকি অভাব। আমি ও মোয়াজ্জেম বন্দুক চালাতে পারতাম। আমার ও মোয়াজ্জেমের বাবার বন্দুক ছিল। আমরা গুলি ছুঁড়তে জানতাম।

সন্ধ্যা হয় হয় এমন সময় খবর এল মিল্লাত অফিস থেকে ঐ এলাকায় যাবার জন্য। আমরা রওয়ানা করে তাড়াতাড়ি ছুটতে লাগলাম, কোন গাড়ি নাই। আমাদের পায়ে হেঁটেই পৌঁছাতে হবে। কেবলমাত্র লোয়ার সার্কুলার রোড পার হয়ে আমরা ছোট রাস্তায় ঢুকেছি, অমনিই কারফিউর সময় হয়ে গেছে। কবরস্থানের পাশ দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। গাড়ির শব্দ পেলেই আমরা লুকাই, আবার হাঁটি। অনেক কষ্টে পার্ক সার্কাস ময়দানের পিছনে এলাম। ময়দান পার হই কি করে? অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টার পর ময়দানের পিছন দিয়ে ‘সওগাত’ প্রেসের মালিক ও সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন সাহেবের বাড়ির কাছে পৌঁছালাম। সেখান থেকে আর একটা রাস্তা পার হয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে ঢুকলাম। কিন্তু এখন কি করি? বন্ধুর বাবা ও মা আমাদের কিছুতেই বার হতে দিতে রাজি হলেন না। কারণ, রাস্তার মোড়েই মিলিটারি পাহারা দিচ্ছে। তারা ছায়া দেখলেও গুলি করে। উপায় নাই। রাতে আমাদের সেখানেই কাটাতে হল। আমরা জায়গামত পৌঁছাতে পারলাম না। যদিও সে রাতে কোনো গোলমাল হয় নাই। প্রায় মাইল দেড়েক পথ অতিক্রম করেছিলাম। যে কোনো সময় গুলি খেয়ে মরতে পারতাম।

পার্ক সার্কাস এরিয়ায় বিচারপতি সিদ্দিকী, জনাব আব্দুর রশীদ, জনাব তোফাজ্জল আলী (ভূতপূর্ব মন্ত্রী), আরও অনেকে ডিফেন্স পার্টির নেতৃত্ব দিতেন। আমরা ছিলাম সেচ্ছাসেবক। শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশনে হিন্দু ও মুসলমানদের ক্যাম্প করা হয়েছিল— যাতে বাইরে থেকে কেউ এসেই হিন্দু বা মুসলমান মহল্লায় না যায়। কারণ, মুসলমানরা হিন্দুদের মহল্লায় এবং হিন্দুরা মুসলমানদের মহল্লায় গেলে আর রক্ষা নাই।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং-৬৭-৬৮)

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৫৩)

৫৯৪জন ৫৯৪জন
0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ