সূর্য তাদের বাড়ীতে আগত কিছু রোহিঙ্গা শরনার্থীর জন্য মুলিবাশ ও টিনশেট ক্রয়ে ডেমরাা তাঁরাব এলেন।সাথে ছিলেন অভি।সূর্যদের বাড়ীটিতে ঘর তোলার মতন তেমন কোন জমিন খালি ছিলো না বাড়ীর পাশে যে ফুলের বাগান ছিলো সেখানে একটি টিনশেট ঘর তুলার মতন জায়গার ব্যাবস্থা করলেন সূর্য।আগত অতিথীদের ভাষ্য মতে কারো মাথার বুঝা হয়ে ওরা এখানে থাকতে চান না।একটু থাকার স্থান পেলে নিজেরাই একটি ছোট খাট কাজ যুগিয়ে দিন যাপিত করবেন।তবে ওদের সাথে আসা কিশোর ছেলে দুটোকে সূর্য্যের ক্লাব কর্তৃক স্কুলে ফ্রি লেখা পড়ার ব্যাবস্থা করলেন।ওদের জামা কাপড় থেকে শুরু করে সকল ব্যায় অভির ধনাঢ্য পিতার কাধে।এ ভাবেই আগত অতিথীদের বিভিন্ন দিক দিয়ে সহযোগিতা করলেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা।এলাকা বাসীর কথা হলো ওরা যে দেশ থেকেই আসুক আমাদের দেশে ওরা এখন মেহমান আর মেহমানদারীতে বরাবর বিশ্ব সমাধিত বাংলাদেশ।
তারাবঁ ঘাটে যেতে বেশ সময় লাগল।কারন দুপুরে এস এস সি পরীক্ষার্থীদের আসা যাওয়া সময়টাতে রাস্তাঘাটে লোকে লোকারন্য।তারাবঁ ঘাটে যেতে শীতলক্ষ্যা নদীর এ পার হতে নৌকায় উঠলেন অভি ও সূর্য।
নৌকায় কয়েকজন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিবাভক ছিলেন।পরীক্ষার্থী ছেলে মেয়েরা কেউ কেউ নৌকায় বসেই নোট বুকে চোখঁ বুলাচ্ছেন কেউ বা মনে মনে কোন এক কঠিন পড়া বার বার মুখস্ত করছেন।নৌকা চলছে শীতলক্ষ্যার বিষাক্ত জলের উপর দিয়ে ছলাৎ ছলাৎ।এর মধ্যে দুজন অভিবাভক আফসোস করছেন বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে।
-জানেন!আগে যখন আমরা এস এস সি পরীক্ষা দিতাম তখনকার পরীক্ষার্থীদের মনে পরীক্ষার একটি আলাদা ইমেজ কাজ করত।যেমন রোজার ঈদেঁ সকালে গোছল করতে শীতলক্ষ্যায় আসতাম তেমনি ইমেজ আবার একটু একটু ভয়ও লাগত না জানি প্রশ্ন কমন পড়ে কি না?
সাথে থাকা লোকটি হেসে দিয়ে বললেন…
-এখন আর পড়তে হয়না বুঝলেন?পরীক্ষার আগেই সব প্রশ্ন পত্র কিনতে পারা যায়।
-হ্যা তাইতো ভাবছি….এখন শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে দাড়াল!একেবারে শেষ।তবে এ ব্যাপারে সরকার কি করছে?
-সরকার কি করবে!আপনার ছেলে মেয়েকে ঐসব প্রশ্নপত্র কিনে দিয়েন না তাহলেইতো হলো।
-তাও ঠিক  আছে তবে এ প্রসঙ্গ ছাড়াও যে শিক্ষাটা কেবল ধনীদের জন্য সে দিকে নজর দিয়ে শিক্ষাখাতের ভর্তুকিটা আরো একটু বাড়িয়ে দিয়ে স্যারদের দিকে তাকালে স্যাররাও আমাদের শিক্ষাখাতের ব্যায়ের দিকটা কমিয়ে আমাদের মধ্যবিত্ত নিন্মবিত্তদের সামর্থ্যের মধ্যে আনলে ভাল হত।..... (y) এই যে ধরুন আমি যা প্রতি মাসে বেতন পাই তা পাওয়ার পর আমার চোখে মুখে অন্ধকার নেমে আসে।অফিসে বেতন থেকে ১৫% ট্যাক্স কেটে রাখে সরকারের খাতে জমা করে দেয়ার জন্য।যত হৈ চৈ করি না কেন তা বলবত থাকে বছরে বার মাসেই।যাক সব ঠিক আছে আমিতো টেক্স দিতে প্রস্তুত কিন্তু কেনো দেবো কোথায় তা খরচ হয় তা জানেন?
পাশের লোকটি মাথা নেড়ে জানান দিলেন না জানেন না সে বরং সেও তার টেক্স দিয়ে থাকেন।অতপর লোকটি বলতে শুরু করল৴৴৴৴
(y) আমার বেতন হতে দেয়া টাকা ১০০ টাকা ট্যাক্স থেকে ২২ টাকা যায় সরকারি কর্ম কর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতা বাবদ।
প্রায় সাড়ে ৯টাকা যায় তারা যখন বুড়ো হয়ে যান,সে সময়ের পেনশন বাবদ! ১৭ টাকা সরকার খরচ করে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য যে ঋণ করেছে,তার সুদ পরিশোধ করা বাবদ!
অথচ কি সেবাটা আমরা পাচ্ছি?
(y) রাস্তায় বেরুতে গেলে কোন পাবলিক বাস নাই।বাস পেলে বসার জায়গা নাই।
সি এন জিতে উঠতে চাইবেন,সে আকাশ ছোঁয়া দাম বলবে।পরিস্থিতি যত বেশি প্রতিকূল,সে দামও চাইবে তত বেশি।
(y) বাজারে জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে,মোটা চালের দাম ৪৫/৫০ টাকা কেজি!
বেতনের  ১৫% ট্যাক্স দেয়ার পর,আমরা সারা মাসে যা কিছু কিনতে যাবো,তার উপর ভ্যাট দিতে হবে।মাছ মাংস কিনবো?তাতে ভ্যাট দাও।মুদি দোকান হতে চাল ডাল যাই কিনবো তাতেও ভ্যাট দাও?ভ্যাট দাও! হোটেল  রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো? ভ্যাট দাও!এখন প্রশ্ন হলো এক বেতন থেকে আমি আসলে কতবার বা কত পার্সেন্ট ট্যাক্স আর ভ্যাট দেবো সরকারকে?
(y) বাংলাদেশী মানুষ প্রকৃতিগত ভাবে সঞ্চয়ী মাইন্ডেট।এক বেতন থেকে এতো জায়গায় টেক্স ভ্যাট দেয়ার পরও ভবিষৎতের জন্য কোন না কোন ব্যাংকে ডিপোজিটে টাকা জমানোর চেষ্টা করেন এখন সেই টাকা হতে যদি সরকার টেক্স কাটেন তবে ব্যাপারটা কেমন লাগে।কয়েক মাস আগে মন্ত্রী বলেছিলেন,আগামী ১ জুলাই থেকে কারো ব্যাংক একাউন্টে যদি ১ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা থাকে তাহলে তাকে ১০০০ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে।অর্থ্যাৎ,যদি আপনি আগামীকাল  তিন মাস মেয়াদে ১ লাখ টাকার এফ ডি আর করেন তবে মেয়াদ শেষে ৪.৫০% হারে মুনাফা পাবেন ১,১২৫ টাকা আর উৎস কর হিসাবে এই ১,১২৫ টাকার ১৫% হিসাবে কাটা যাবে ১৬৯ টাকা এবং ট্যাক্স ১,০০০ টাকা।অর্থ্যাৎ  মোট কেটে নেবে ব্যাংক (১৬৯+১,০০০) = ১,১৬৯ টাকা।তিন মাস পরে আপনি ফেরত পাবেন,(১০০,০০০ + ১,১২৫ -১,১৬৯)= ৯৯,৯৫৬ টাকা। এখন দেখেনতো কি গাজাখুরি আইন করছিলো লাভ তো দূরের কথা, তিন মাস খাটানোর পর আপনার মোট ক্ষতি হবে ৪৪ টাকা!
এরই মধ্যে নৌকা তীরে এসে ভিরল হুর হুর করে পরীক্ষার্থী যাত্রীরা নৌকা হতে নামতে উঠে দাড়ালেন।সাথে তারাও দাড়ালেন কিন্তু লোকটির কথা শেষ হয়নি আর হয়নি বলেই সে সূর্য এবং অভি এবং সেই লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন।
-আপনারাো মনে হয় স্কুলেই যাবেন।তবে চলুন আড্ডা দিয়ে পরীক্ষার সময়টা পার করা যাবে।
=আমার মেয়ে পরিক্ষার্থী চলেন।
লোকটি সূর্য ও অভিকে জিজ্ঞাসা করেন।
-তোমরা বাবারা তোমরাও চলো আড্ডা হবে কথা হবে।
-না মানে আংকেল আমরা ঢাকা থেকে এসেছি ঐ কিছু কাঠ আর বাশ কিনবো বলে।
-তাই!সমস্যা নেই আমি তোমাদের সাথে যাবো।নতুন হিসাবে তোমাদের কাছ থেকে দাম নেবে বেশী।আমরা স্কুলে পরীক্ষা কেন্দ্রে মেয়েদের ঢুকিয়েই হাটে চলে যাব কি বলেন?
পাশে থাকা লোকটিকে বলতে বলতে নৌকা হতে মেয়ে দুটোকে নিয়ে তারা নামলেন।

নতুন এলাকা তাদের কাছে সবই নতুন তবে সূর্য বেশ পনের বিশ বছর আগে একবার এসেছিল বলে তার কাছে কিছুটা রাস্তাঘাট পরিচিত লাগছে তবে নাগরিকদের নগরায়ণে কেটে ফেলা হয়েছে বহু গাছ পালা।লোক দুটোর পিছনে ওরা।মেয়ে দুটোকে পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকিয়ে তারা একটি ছোট হোটেলে বসে চার কাপ চায়ের অর্ডার দিলেন।অতপর লোকটি সূর্য ও অভির পরিচয় জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়ে তার কথা শুরু করলেন।
-যা বলছিলাম,আমাদের জনগণের সুবিদা অসুবিদা কোন সরকারই ভাবেন না আর ভাববেন কি করে নিজের রক্ষা করতেইতো ব্যাস্ত সব সময়।কথা নেই বার্তা নেই মন চাইল গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিল।চুলাও তেমন জ্বলছে না লোড সেডিংও কম হয় না।অথচ ওনারা থাকেন এসি রুমে আমরা গরমে আর রান্নাহীন ভাবে না খেয়ে মরি।
আবার ধরেন আপনি কোন থানায় যাবেন জিডি করতে সেখানেও ঘুষ।
লাল হলুদ ফিতের ফাইলগুলোকে নড়াতে হলে দিনের পর অপেক্ষা করতে হয় যতক্ষন না ঘুষ দিবেন।আর ঘুষ যদি না দেই সে আপনাকে চিনবেই না।
সরকারী কোন প্রকল্পের কথাই ধরেন একটা প্রকল্প শুরুর সময় আছে,আর কখন যে এর শেষ হবে তা আল্লাহমালুম জানেন আবার দেখা  গেছে যে বিভিন্ন প্রকল্প যেমন কাজের বিনিময়ে খাদ্য নামে আসা বৈদেশিক সাহায্যগুলো নিজেরাই  ভাগ বন্টন করে খেয়ে ফেলেন,সরকারী অনেক কাজ না করেই দুর্নিতীদের যোগ সাজসে কন্টেক্টটারেরা বিল তুলে খেয়ে ফেলেন।
হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাবে ভিনদেশে! আমরা তাদের নামও জানতে পারবো না!

সময় পেরিয়ে যাচ্ছে সূর্য চিন্তিত কখন তার বক্তব্য শেষ হবে কখন যাবেন কাঠ বাশ কিনতে তাই কথা ছোট করতেই সূর্য কথাসূলভ বাধা দিলেন।
-আচ্ছা আংকেল সব ঠিক আছে কিন্তু এখান থেকে বেরিয়ে আসার কি উপায়?
-উপায়ের কথা বলছো উপায়তো আছেই তবে সেই দিনও নেই আর সেই প্রতিবাদও নেই।তবে তোমরা যে কি বললে,,,ও হ্যা তোমারাই পারবে…তোমাদের মতন তরুণদের আরো এগিয়ে আসতে হবে।পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসতে হবে তবেই সম্ভব এ দেশ হতে এ সব অনিয়ম দুর্নিতী দুর করা।
-আমি বলছিলাম কি আংকেল সময়তো অল্প একটু যদি আমাদের সাথে যেতেন বাশ কাঠগুলো দ্রুত কিনা দরকার নতুবা ঘর তৈরীতে একদিন পিছিয়ে গেলে ওরা কষ্টে থাকবে,বুঝেনইতো শীতকাল।
-ও হ্যা চলো…
চায়ের বিল দিতে দিতে……
তবে তোমাদের কথা শুনে তোমাদের যে কার্যকলাপের প্লান বললে তাতে আমি গর্বিত।আসছে ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্টান করবে ভাষা সৈনিকদের সন্মাননা দিবে এটা নিঃসন্দেহে ভাল কাজ।ভাষা আন্দোলন হয়েছিলো বলেই এর ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ হলো পেলাম এক স্বাধীন দেশ।সেই স্বাধীন দেশের এই স্বাধীন মানুষ আমরা যদি যুদ্ধে শহীদ গাজীদের কল্যায়ণের কথা চিন্তা না করি তবেতো আমরা মোনাফেক মীরজাফরের চেয়েও খারাপ।তোমাদের কাজে আমার দোয়া থাকবে।চলো দেখি তোমাদের কাঠ বাশ কিনে দেয়া যায় কি না।

নৌকা বুঝাই বাশ ও কাঠ নিয়ে এ পারে এলেন।এপার হতে একটি ছোট ট্রাক ভাড়া করে যেতে হবে ঢাকায়।তাই সূর্য অভিকে কাঠ বাশগুলোর পাহারায় বসিয়ে সে গেলে ট্রাক ভাড়া করতে ট্রাক ষ্টেসনে।সে তো অবাক!আজ কি হরতাল  নাকি নাকি বাস ট্রাকের ধর্মঘট!।এরই  মধ্যে একটি মিছিল যাচ্ছে,,,,।সূর্যের মনে পড়ল আজততো  সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় দেয়ার কথা।রায়ে  হয়তো খালেদা জিয়ার জেল হয়ে যাবে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই প্রথম কোন এক প্রধনমন্ত্রীর ক্ষমতাকালে বৃহৎ বিরোধীদলের প্রধানকে দুর্নিতীর দায়ে জেলে দিলেন।

চলবে…

গত পর্ব

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ