নীলা, নীলা।
ঘুম ভেঙ্গে গেল নীলার, লাফ দিয়ে উঠে বসলো নীলা, উঠে বসে লজ্জিত নীলা বললো, সরি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কখন বুঝে উঠতে পারিনি, আপনার কাজ কি শেষ, কয়টা বাজে?
রাত দুইটা, কাজ শেষ হয়ে যাওয়াই দেখলাম আপনি ঘুমিয়ে গেছেন, আবীর বললো।
এতো রাত হয়ে গেলো?
হাঁ রাত গভীর এখন।
ওহ তাহলে আমি আমার রুমে যায়, আপনি ঘুমান।
আচ্ছা চলুন আপনাকে আপনার রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিই, আবীর নীলার সাথে গিয়ে রুমে দিয়ে এসে, নিজেও শুয়ে পড়লো, কিন্তু সহজে ঘুম আসলোনা, বারে বারে ওর টেস্টের ফল ওর মাথায় ঘুরছে, এমন ফল ও আশা করেনি, এমন কেন হলো, নাকি অন্য কিছু?
টেবিল ঘড়ির টুং টাং শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল আবীরের, কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে উঠে পড়লো, টয়লেটে গিয়ে ফ্রেস হয়ে জগিং স্যুট পরে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
জগিং করতে করতে উত্তরের বাগানের দিকে এগুলো ও, আজ ওখানে নতুন চারা লাগানোর কথা আছে, তাই দেখতে চলেছে, নতুন প্লান্টেসনের এলাকায় এসে ও জগিং থামিয়ে হেটে বাগানের উপরে চলে এলো, বাগান শ্রমিকরা চারা রোপন করার জন্য মাঠি খুঁড়ে চলেছে, এক পাশে চারা গুলো জমা করে রাখা হয়েছে, চা বাগানের নিয়ম হলো, বাগান এমন করে করা হয় যেন কোন ভাবেই পানি জমতে না পারে, তা বৃষ্টির পানি হোক বা সেচের পানি, তাই বাগান করা হয় ঢালু অংশে, আর চারা গুলো লাগানো হয় দেড় মিটার পর পর।
আবীর সব দেখে শুনে পাশের বাগানের দিকে তাকালো, পাশের বাগানের গাছ গুলোকে প্রুনিং বা ছাটাই করা হয়েছে, এগুলো প্রুনিং না করলে অযথা বেড়ে যাবে, সাথে নতুন কুড়িও আসবেনা, তাই প্রুনিং করা জরুরী।
আবীর চলে যাবে দেখে এক শ্রমিক এগিয়ে আসলো আর বললো, সাহেব একখান মাত মাতিবার চাই।
বলো, আবীর চোখ তুলে তাকালো।
সাহেব, গ্রামে আর দক্ষিণ পাড়া মিলে মাত্র দুইটা নলকূপ ছিলো, তা অনেক বছর খারাপ, খালের পানি খাইতাম ফারিনা আর, ছুডু চাওল ফুরিতনে পানি আনবার ফারেনা, আফনে যদি দেহন খুব ভালা ফাইতাম।
তাই, আচ্ছা আমি একটু খবর নিয়ে দেখি, তারপর দেখবো কি করা যায়, বলেই আবীর রওনা হয়ে গেল নিজ বাংলোর উদ্দেশ্যে।
বাংলো থেকে মাইল খানেক দূরে আছে সে, তখন খেয়াল করলো ট্র্যাক স্যুট পরা কেউ একজন দূরে বসে আছে ওকে পিঠ দিয়ে, দেখে মনে হচ্ছে নীলা, হাটার গতি বাড়ালো আবীর, কাছে গিয়ে দেখে নীলা মাটিতে বসে পা ঘসছে।
কি হলো, কোন সমস্যা?
আরে আপনি, না তেমন কিছুনা, জগিং করছিলাম, মনে হয় পা মচকে গেছে, নীলা হাসার চেষ্টা করলো।
তাই, ওকে এখন জুতা খুলবেন না, উঠে দাঁড়াতে পারবেন?
না পারছিনা, চেষ্টা করেছি, খুব পেইন হচ্ছে।
ওকে আমি ধরছি, আপনি আমার কাঁদে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন, বলেই আবীর পাশ উবু হয়ে বসে নীলাকে ওর কাঁদের উপর হাত দিতে বললো, নীলা আবীরের কাঁদে ভর দিতেই, আবীর উঠে দাঁড়াতে শুরু করলো ধিরে ধিরে, নিলা আবীরের কাঁদে ভর দিয়ে আবীরের সাথে উঠে দাঁড়ালো।
গুড, এখন আপনি হাটার চেষ্টা করুন।
নীলা হাটতে গেলেই ব্যাথায় কুঁকড়ে গেল দেখে আবীর একটু চিন্তা করেই করণীয় ঠিক করে বললো, আপনি এইভাবে হাটতে পারবেননা, প্লিজ মাইন্ড করবেননা, বলেই নীলাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো আর হাটতে লাগলো।
নীলা আবীরে গলায় হাত দিয়ে অবাক চোকে তাকালো, আবীর সামনের দিকে তাকিয়ে হাটছে।
আবীর আপনার কষ্ট হচ্ছে, নীলা কান্না করে দেবে দেবে অবস্থা।
আপনি চুপ থাকুন প্লিজ, সামনে দেখুন, বাংলো দেখা যাচ্ছে।
সামনে তাকিয়ে নীলা আবার বললো, সামনের পথ তো উঁচু?
আবীর চুপচাপ এগিয়ে গেল ক্রমশ উপরে উঠে যাওয়ার পথ ধরে, বাংলোর সিঁড়ি দিয়ে উঠে বেতের সোফায় আসতে করে বসিয়ে দিলো নীলাকে, এরপর নিজে সোফায় বসে পড়ে হারাধনকে ডাক দিলো।
জি স্যার, হারাধন দৌড়ে এলো।
আমাদের জন্য পানি নিয়ে এসো।
হারাধন তাড়াতাড়ি দুই গ্লাস পানি নিয়ে এলে আবীর আর নীলা পানি পান করলো ঢকঢক করে, পানি পান শেষে আবীর নীলার সামনে উবু হয়ে বসে বললো, এখন পা লম্বা করে দিন, আমি জুতা খুলে নিচ্ছি।
না না ছি ছি, আমিই খুলছি, নীলা নিজেই জুতা খুলতে গিয়ে ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলো।
এই আপনি এতো কথা বলেন কেন, চুপচাপ থাকুন, আমার কাজ আমাকে করতে দিন, বলেই আবীর আসতে আসতে নীলার কেডস খুলে নিলো, গাড়ীর আওয়াজে চোখ তুলে তাকালো, রফিক সাহেব আর রীতা এসেছে দেখলো, আবার আবীর নিজ কাজে মনোযোগ দিলো, আসতে আসতে নীলার পা পরখ করলো, এইদিক ওদিক করলো পায়ের পাতা।
আরেহ কি হয়েছে, মা নীলা কি হয়েছে, রফিক সাহেব উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
চাচা পায়ে ব্যাথা, ও মাগো করে চিৎকার করে উঠলো নীলা, কারণ আবীর পা এদিক ওদিক করতে করতে দিয়েছে এক টান, মুখে বললো, কিছুই হয়নাই আপনি এখন দাঁড়ান দেখি।
না আমি দাঁড়াতে পারবোনা, পায়ে ব্যাথা লাগছে, নীলার চোখ মুখ ব্যাথায় কুঁকড়ে আছে।
আরেহ কিছুই হবেনা, দাঁড়ান প্লিজ আমি ধরছি, বলেই আবীর হাত বাড়ালো।
নীলা হাত ধরে এক পায়ে আসতে করে উঠে দাঁড়ালো, এরপর আসতে আসতে বাম পাটা মাটিতে রাখলো।
আবীর হাত ছেড়ে দিয়ে বললো, এখন কেমন লাগছে?
পায়ের ব্যাথা একটু আছে, নীলা অবাক চোখে নিজের পায়ের দিকে তাকালো।
হেটে দেখুন, আবীর হেসে বললো।
নীলা আসতে আসতে হাটতে লাগলো।
আনকেল আপনারা দাঁড়িয়ে কেন, বসুন।
হাঁ হাঁ বসছি, ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি, রফিক শেখ বললেল।
উনি জগিং করতে বের হয়েছিলেন, পা মচকে ফেলেছিলেন, আবীর হাসতে হাসতে বললো।
মামনি কেমন লাগছে এখন?
একদম ঠিক আছি চাচা, আবীর সাহেব যাদু জানেন দেখছি, নীলা জবাবে বললো।
তাই তো দেখলাম, তা আবীর এ কাজ কোথায় শিখেছো?
আমেরিকাতে আমার এক চায়নিজ গুরু ছিলো, মার্শাল আর্ট শেখার সময় আমাদের প্রায় হাত পা ভাঙ্গতাম, মচকে যেতো, উনি নিজেই এই চিকিৎসা করতেন, উনার কাছ থেকেই শিখেছি।
বাহ, আবীর সাহেব দেখি সর্বগুণের অধিকারী, রীতা হেসে বললো।
আসলেই আবীর অনেক গুণি ছেলে।
আনকেল আপনারা বসুন, আমি ফ্রেস হয়ে আসি, হারাধন, আমাদের ব্রেকফাস্ট রেডি কর।
আমিও ফ্রেস হয়ে আসতেছি, নীলা নিজ রুমে যেতে যেতে বললো।
বাহ, হারাধন দেখি আজ আলিশান ব্রেকফাস্ট বানিয়েছে, আনকেল নিন আপনারা।
না বাবা আমরা খেয়েই এসেছি, আমরা চা নিবো শুধু, রফিক সাহেব বললেন।
আনকেল, ভেজিটেবেলটা হলেও নিন, রীতা কই নিচ্ছেন না?
আচ্ছা আচ্ছা হাল্কা করেই নিচ্ছি, রীতা নে মা।
খাওয়া শুরু করেই রফিক সাহেব বললেন, তুমি নাকি উত্তরের বাগানে গিয়েছিলে?
হাঁ দেখে এলাম, বাগানের কাজ ভালোই চলছে দেখলাম।
হাঁ এখন যে চারা লাগানো হচ্ছে, তা থেকে গ্রীণ টি হবে।
আনকেল, শুনলাম গ্রামের টিউবওয়েল গুলো ঠিক না?
তা তো অনেক বছর ধরে নষ্ট, আমি আগের ম্যানেজার সাহেবকে বলেছিলাম, উনি কোন জবাব দেননি।
ওকে, আমি কালই এমডি সাহেবকে অনুরোধ করবো।
ভালো হবে বাবা।
আনকেল, এইখানে কতো গুলো উপজাতি কাজ করে জানেন?
আমার জানা মতে প্রায় তের চোদ্দটা জাতি কাজ করে।
হুম, আর এতো গুলো মানুষের জন্য নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, না নেই ভালো কোন বাসস্থান, আশ্চর্য।
হাঁ বাবা, এরা মানবেতর জীবন যাপন করছে, যা দুঃখজনক।
আমি কি আব্বুকে বলবো, নীলা জিজ্ঞেস করলো।
না নীলা, এই কাজ আমাদের, আমিই স্যারের সাথে কথা বলবো।
তাহলে ঠিক আছে।
আনকেল শুনেছি শ্রীমঙ্গলের গ্রান্ড সুলতাল হোটেল খুব ভালো, চলুন আজ ওখানেই লাঞ্চ করি সবাই, আপনারা বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে নিন, আন্টিকে বলবেন আমি দাওয়াত দিয়েছি।
__________ চলবে।
ছবিঃ Google.
লেখকঃ সোনেলার সকল বন্ধুদের, বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা অশেষ।
১৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
খুব উপভোগ করছি আপনার লেখা চালিয়ে যান ভাই। আছি।
ইঞ্জা
দুঃখজনক, গল্পটা আমাকে টানছেনা, গল্পের গতিও পাচ্ছিনা, তাই গল্পটি দ্রুত শেষ করে দেবো ভাই, আশা করি আপনিও বুঝতে পারছেন বিষয়টি।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ দাদা, এই পর্বটাও বেশ ভালো লেগেছে। চালিয়ে যান, শেষ পর্ব পর্যন্ত পড়তে চাই।
ধন্যবাদ দাদা, ভালো থাকবেন।
ইঞ্জা
দাদা, গল্পটির লেখার গতি পাচ্ছিনা, তাই দ্রুত শেষ করে দেবো ভাবছি, পাশে থাকবেন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আপনি গল্পের গতি পাচ্ছেন না আমার তা মনে হচ্ছে না।গল্পের ধরণ ভিন্ন ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক।চালিয়ে যান।
ইঞ্জা
ভাই, গল্পের মূল বক্তব্যেই গলদ পাচ্ছি, ভেবেছিলাম চা বাগান ও শ্রমিকদের মানবের জীবনযাপন নিয়ে আবর্তিত হবে গল্পটি, কিন্তু এ নিয়ে পড়তে যখন শুরু করি দেখলাম প্রচুর গলদ, এইটা সাজিয়ে নিতে গেলে ওদের ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে আরো বেশি জানতে হবে, নিজের অভিজ্ঞতা না থাকলে বিপদ।
আবু খায়ের আনিছ
ভাষার দখলটা খুব দক্ষতার সহিত উপস্থাপন করেছেন ভাইয়া। অসাধারণ লেগেছে। মাঝের একটা পর্ব মিস করেছি, পড়ে নিব। গল্প চালিয়ে যান।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, চা শ্রমিকদের ভাষা না জানাটাই এই গল্প লেখাটার জন্য বিপদ হয়ে গেছে। 🙁
আবু খায়ের আনিছ
সেটা অবশ্য ঠিক, বই পড়ে যতটুকু জানতে পারবেন ঠিক ততটুকু ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি সুযোগ হয় ঘুরে আসতে পারেন চা বাগান।
ইঞ্জা
না ভাই, ভুলটা আমারই যা এইবার শিখলাম, ভবিষ্যতে এ বিষয় সম্পর্কএএ শিখেই লিখবো।
আবু খায়ের আনিছ
আমি ঠিক এটাকে ভুল বলব না, কারণ আপনি চেষ্টা করছেন, আর যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন। হয়ত আপনার অনেক কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আপনি চেষ্টা করছেন এটা অনেক বড়। অনেকে এটাই করতে পারে না।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই। -{@
নিতাই বাবু
শেয পর্বটাও পড়েছি দাদা, গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে।এমন আরও একটা শুরু করে দেন, আমরা পড়তে থাকি।
ইঞ্জা
অবশ্যই লিখবো দাদা।