ছবিতে একেবারে সামনের মেয়েটির নাম এমিলি...

আমার নার্সিং সুপারভাইজার লিয়া আমাকে খুবই ভালোবাসে। আর সে যে আমাকে কী পরিমাণ কেয়ার করে তা জেনেছি এক্সিডেন্টের পর। আমি যে ওয়াকার ব্যবহার করি সেটা ওরই দেয়া। আর লিয়ার মেয়ে এমিলি জানিনা আমাকে কেন এতোটা ভালোবাসে! আমার যেহেতু মেয়ে নেই, তাই এমিলিকে আমি খুব বেশি ভালোবাসি। এমিলি চমৎকার ব্যালে করে। ব্যালে নাচ সম্পর্কে সকলেই জানেন। তবে ব্যালে নিয়ে কথা হবে অন্য আরেকদিন। আসলে আজ এমিলির অনুষ্ঠানের কথা বলতে এসেছি। এই প্রথম সরাসরি ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক ড্যান্স-এর অনুষ্ঠান দেখলাম। থিয়েটারে ঢোকার মুখেই লেখা কোনো ভিডিও কিংবা ছবি তোলা যাবেনা ভেতরে গিয়ে। মনটা আহত হলেও কিছুই করার ছিলোনা। গেটে টিকেট দিলাম। আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো, আমার বন্ধু দুটো টিকেট ৬০$ দিয়ে কেটেছিলো। আমি আবারও কৃতজ্ঞতা জানালাম ওকে।

অনুষ্ঠানটি গত শনিবার ১০ জুন তারিখে স্যার জন.এ.ম্যাকডোনাল্ড সেকেন্ডারি স্কুলের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। শুরু হয়েছিলো দুপুর সাড়ে বারোটায় আর শেষ হয় চারটের সময়। আমি সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ছিলাম। মোটেও বিরক্তি আসেনি। যাক যা বলছিলাম অনুষ্ঠানটির নাম For The Love of Dance এবং এটি উপস্থাপন করে Independent Dance Movement নামের দলটি। আসলে এটি ছিলো এই দলের বাৎসরিক উপস্থাপনা। উপস্থাপিকা অনুষ্ঠানটি শুরু করার আগে বলে নেয় সেলফোন ব্যবহার না করে অংশগ্রহণকারীদেরকে উৎসাহ দিতে। এমিলি এই অনুষ্ঠানের একজন নৃত্যশিল্পী। মাত্র বারো বছরের একটি মেয়ে কী অসাধারণ ব্যালে, জ্যাজ, হিপহপ নাচে ভাবাই যায়না। এই ওন্টারিও প্রভিন্সে এমিলি ব্যালে নাচে বেষ্ট এওয়ার্ড পেয়েছে। এমনকি ট্যালেন্ট শোতে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। তবে এই অনুষ্ঠান একেকটি দলে ভাগ করা ছিলো। যেমন আফ্রিকান/ক্যারিবিয়ান ফিউশন গ্রুপ, ব্যালে গ্রুপ, হিপহপ গ্রুপ, জ্যাজ গ্রুপ, এক্রো গ্রুপ। এখানে তিনবছর বয়স থেকে আঠারো বছরের ছেলে-মেয়ে সকলেই অংশগ্রহণ করেছে। অনুষ্ঠান শুরু হলো আফ্রিকান/ক্যারিবিয়ান ফিউশন গ্রুপের নাচ দিয়ে। একেকটি নাচ বিভিন্ন কিছু তুলে ধরেছে। যেমন পৃথিবীতে গাছ না থাকলে কেমন হবে সবকিছু। তারপর এই যে আমরা প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহার করি তাতে কতো দূষণ ছড়াচ্ছে! এছাড়াও ছিলো শিশুদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিৎ শিক্ষকদের? প্রতিটি গান বয়সের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছিলো। যেমন ষোলো/সতেরো/আঠারো বছরের চিন্তা-ভাবনার সাথে মিলিয়ে গান, একইসাথে তিন থেকে পনেরো আলাদা ভাবনা। এ অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে ভাবলাম বয়সকে কিভাবে সাজাতে হয়! আমি সেই ছোটবেলাতে নেচেছি "প্রজাপতি, প্রজাপতি," কিংবা "ওরে গৃহবাসী" ইত্যাদি রবীন্দ্র-নজরুল গানের সাথে। আর গানের ক্ষেত্রেও ওই পঞ্চকবিরই গান। কিন্তু আমাদের দেশের শিশুদেরকে দেখি বিভিন্ন ট্যালেন্ট শোতে গান কিংবা নাচের ক্ষেত্রে বয়সটাকে ধরেই না। অবশ্য যে দেশে পনেরো বছর বয়স হলেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে শিশুকাল আর কি! নাহ ওসব কথা বলতে চাইনা।

এই যে শিশুরা নেচেছে, তাদেরকে শিখিয়েছে ড্যান্স স্কুলেরই শিক্ষার্থীরা। আমার এই আইডিয়াটা খুবই ভালো লেগেছে। এখানে ড্যান্স স্কুলে যেসব ছেলে-মেয়ে নাচ শিখতে আসে, তারা জুনিয়র অবস্থায় তাদের শিক্ষকের কাছ থেকে যে নাচটা শিখে, সেটাই আবার ওরা জুনিয়রদেরকে শেখায়। তাতে কী হয়! শিক্ষার্থীরা আরোও বেশি পারদর্শী হয়ে ওঠে। আর যারা শেখায় তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে যে ভালো শিখিয়েছে সেই শিক্ষার্থীকেই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের এওয়ার্ড দেয়া হয়। আবার জুনিয়রদের মধ্যে যে ভালো নেচেছে তাকে সনদপত্র দেয়া হয়। কেউ কেউ ৫০ ডলারের স্কলারশিপও পেয়েছে। ড্যান্স স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এসব এওয়ার্ড দিয়ে উৎসাহিত করেন ছেলে-মেয়েদের। বেষ্ট টিচার এওয়ার্ড পেলো এমিলি। অথচ ওর বয়স মাত্র বারো। ওইটুকু মেয়ে ৫/৬ বছরের শিশুদেরকে শিখিয়েছে, ভাবা যায়! ওহ মজা হলো এসব এওয়ার্ড, সনদপত্র অনুষ্ঠানের মধ্যে মধ্যে দেয়া হয়। যেমন তিনটি নাচের পরে এওয়ার্ড বিতরণ, এভাবেই চলতে থাকে। আমাদের দেশে অনুষ্ঠানের একেবারে শেষে গিয়ে এওয়ার্ড দেয়া হয়। তাতে কী হয়, দর্শক চলে যায়। নাহ এখানে দর্শকরা জ্বালায় না, আবার উঠে চলেও যায়না। বরং আমাদের বাঙ্গালীদের মতোই নেচেছে, চিৎকার করে উৎসাহ দিয়েছে।

আজ এটুকুই থাক! বাকীটুকু আগামীকাল, কেমন?

পরের পর্বে সমাপ্ত

 

হ্যামিল্টন, কানাডা
১৪ জুন, ২০১৭ ইং।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      ব্যালে নিয়ে লেখার কথা মাথায় আছে। একটু সুস্থ হয়ে নেই। বসে থাকতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে বেশ কিছুদিন থেকে।
      আসলেই এমিলির অসাধারণ প্রতিভা। একেবারে তিন বছর বয়স থেকে ব্যালে শুরু করেছিলো। শুধু কি নাচে? লেখাপড়াতেও। ওর স্বপ্ন একদিন ও স্পেস ষ্টেশনে গিয়ে কাজ করবে।

  • নীহারিকা

    বয়সের সাথে নাচ এবং গান পছন্দের ব্যাপারটি ভালো লাগলো আমার। আমি আমাদের দেশের বিভিন্ন শোতে দেখি বাচ্চাদের দিয়ে রোমান্টিক গান/নাচ করানো হয় বা ওদের শেখানো হয়। এটা আমার মোটেই ভালো লাগে না। আর এমিলির মত আমাদের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যদি এভাবে শিক্ষা দেয়া হয় যে, যে যার ছোটদের শেখাবে আবার এর উপর মূল্যায়ন হবে তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরাও অনেক পারদর্শী হয়ে উঠতে পারে। খুব ভালো লাগলো লেখাটি।
    পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      আপু আমার ভালোই লাগেনা এখনকার জুনিয়র নাচ/গানের শোগুলো। ওদেরকে সময়ের আগেই বড়ো করে দিচ্ছে। মনে আছে ফেরদৌসী রহমানের “এসো গান শিখি” অনুষ্ঠানটির কথা? একাগ্রমনে অনুষ্ঠানটি দেখতাম। অপেক্ষায় থাকতাম। আজকাল এমন অনুষ্ঠান কোথায় আর?
      আপনি কিন্তু শিক্ষক হিসেবে এ কাজটি করতে পারেন। আমার মামনি করতো কি ক্লাশে যে বুঝেছে, তাকে বলতো সবাইকে বুঝিয়ে দিতে। আমি আমার মামনির ছাত্রী ছিলাম তিন বছর। 🙂 যে ছাত্রী বুঝিয়ে দিতো, তারপর যারা বোঝেনি তাদেরকে বলতো হাত তুলতে। যারা হাত তুলতো না, তাদেরকে সেই দায়িত্ব দিতো বোঝানোর। প্রথম ছাত্রীটিকে মামনি টিফিনে সিঙ্গারা এনে দিতো।

      আপু পরের পর্ব দিয়েছি।

  • মিষ্টি জিন

    দিদি ড্যান্স এন্ড মুভমেন্টের কঁথা বললেই বলতে হয় আমার ছোট মেয়ের কথা। এই মেয়েটা আমার সিংগাপুরে চার বছর ড্যান্স এন্ড মুভমেন্ট শিখেছে। সাথে ব্যালে। ওর নাচ দেখে ওর ইন্সট্যাক্টর বলেছে অন্যান্যরা তিন বছরে যা শিখে ও তা এক বছরে শিখেছে। সিংগাপুরে এশিয়ান গেমস সহ বিভিন্ন অনুষ্টানে ও নেচেছে । ও ওর জুনিয়রদের ও নাচ শিখাতো এবং এটাই নাকি ওদের নিয়ম।
    বয়স অনুযায়ী বাচ্চাদের নাচ এবং গান শিখাতে হঁয় ।ছোটদের কখনই বড়দের গান শিখাতে হঁয় না। শুনতে ঠিক ভালো লাগে না। আমাদের দেশে কে মানে এই রীতি।
    ভাল লেগেছে পোষ্ট আপু।

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      আমাদের বাঙালী বাচ্চাগুলো খুবই ট্যালেন্ট আপু। এখন কি নাচে আপু? শুনে খুবই ভালো লাগছে। আমি তো তাহলে তোমার মেয়ের ভক্ত হয়ে গেলাম। যেসব ছেলে-মেয়েরা নাচ-গান-আবৃত্তি মানে সাংস্কৃতিক মনোভাবাপন্ন হয়, আমি তাদেরকে খুবই পছন্দ করি।

      আমার বোনের মেয়েও তিন বছর বয়সে ব্যালে শুরু করেছিলো। এখন ওড়িশি নাচে আছে। এ বছরেই ইন্ডিয়া যাচ্ছে ওড়িশি নাচ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। আর রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাধারণ নাচে নিজেই কোরিওগ্রাফি করে। দেখো এটা। ওর কোরিওগ্রাফি এটা। আমার বোন শুধু বাংলা শব্দগুলোর মানে বুঝিয়ে দিয়েছিলো। https://www.youtube.com/watch?v=hiz9r83gcrA

      আপু নতুন লেখা দাও। অনেক ভালো থেকো।
      -{@

  • মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)

    পুরোটা পড়ে আফসোস লাগল এ জীবনে আর ব্যালে ড্যান্স দেখা হবে না তাতে কি আপুর লেখায় মন মানিয়ে নিলাম।একটি কঠিন এবং সুন্দর নাচ।নাচে যে গানের সূরগুলো ব্যাবহার তাও মনে শির ধরায়।এ সব খুব ছোট থাকতেই শিখতে হয় কেননা এ সব নাচে জিমনেসিয়ামের ব্যাপার থাকে।যাক পরের পর্বের অপেক্ষায়।

  • নীরা সাদীয়া

    ডান্স টিচারের ভূমিকায় শিশু, তার পুরষ্কার প্রাপ্তি বেশ লেগেছে। তারপর আবার যেটা বললেন, শিশুরা শিশুবিষয়ক গানের সাথে নাচছে, এটাও অসাধারন। আমাদের দেশেতো বাচ্চারা বড়দের গানের সাথে নাচে, যা খুব বেমানান লাগে। আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে আমি এটাই ভাবছিলাম, একটু নিচে এসে দেখি এটাই লিখেছেন। ভাল লিখেছেন।

  • ইঞ্জা

    প্রথমেই বলে রাখি, আমি ব্যালের ভক্ত, কি যে সুন্দর নাচে ওরা, উফফ।
    ছোটবেলা নাকি মাটির ঢেলার মতো, যা শিখাবেন, তাই শিখবে, এইজন্যই উন্নত দেশরা আরো উন্নত হচ্ছে আর আমরা এখনো প্রজাপতি প্রজাপতিতেই রয়ে গেছি যা দুঃখজনক। 🙁

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      ভাইয়া এখানেও পুরোনো গানের সাথে নাচ হয়। প্রজাপতি নাচটা শিশুদের জন্য দারুণ। এর তুলনা হয়না। কিন্তু আমাদের দেশে এখন জুনিয়র ট্যালেন্ট শো’গুলোতে বড়োদের গান গাইতে বলে বিচারকেরাই। অথচ একসময় “এসো গান শিখি” অনুষ্ঠানে কতো না গান বয়সাণুযায়ী শেখানো হতো। কিশোর-কিশোরীদেরও একটা অনুষ্ঠান হতো বিটিভিতে। ওখানে আমি গানের সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু যাইনি। এখন কিশোর-কিশোরী বলে কিছু কি আর আছে?

      • নীলাঞ্জনা নীলা

        রেওয়াজ কয়টা বাচ্চা করে আজকাল? শুধু গায়ক/গায়িকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

        দুঃখিত ভাইয়া এতোদিন পর মন্তব্যের রিপ্লাই দিলাম। 🙁

  • মৌনতা রিতু

    বয়স অনুযায়ী সবকিছু মানানসই না হলে ভালোই লাগে না।
    আসলেই আমাদের দেশে এরকম কখনোই দেখি না। ইন্ডিয়াতেও দেখি না।
    নাচ গান আমার খুবই প্রিয়।
    আমি কল্পনা করছি তুমি নাচছো, প্রজাপতি প্রজাপতি গানের সাথে। এই গানটা বেশ লাগে আমার কাছে। যখন ছোট ছোট বাচ্চারা সাদা ড্রেস পরে এই নাচটা নাচে।
    বেলী ড্যান্স মেমনের খুব পছন্দ। আমারও বেশ ভাল লাগে।
    এতোটুকু বাচ্চা এতোবড় পুরষ্কার পেলো। ওই স্বীকৃতি ওকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
    তোমার এইসব পোষ্টগুলোও বেশ চমৎকার লাগে আমার। যেমন ছিল,’সিক্সটিন পোষ্টটি।

    • নীলাঞ্জনা নীলা

      আপু বেলি ড্যান্স কিন্তু আলাদা। ব্যালে আর বেলি এক নয়।
      আমার মামনি কিন্তু আমাকে নাচ শেখাতো। জাপানে সরস্বতী পূজোতে মামনির কোরিওগ্রাফিতে নেচেছিলাম “মঙ্গলদীপ জ্বেলে।” হাতে প্রদীপ নিয়ে মঞ্চে আসার আগে মামনি আমাকে সাজিয়ে দিয়েছিলো। 🙂
      এমিলিকে আমি খুব পছন্দ করি। জানিনা কেন এতোটা! এক্সিডেন্টের পর লিয়ার কাছে নাকি সবসময় জানতে চাইতো আমি কেমন আছি! তখনও আমি কিন্তু ওকে দেখিনি। ভাবা যায়? তুমিই বলো!

      ভালো রেখো। -{@

  • মোঃ মজিবর রহমান

    আপু আসলে পরিবার, সমাজে, রাস্ট্রে যদি শিশু থেকে উঠতে না পারে বড় হলে উঠা খুব কস্টের। দেরিতে হলে হয় খুব মেধা গুনে বাঁ নতুন কোন পরিবেশে উঠতে পারে। ব্যালে ড্যান্স দেখা ভালভাবে হয়ে উঠে নি।

    আমার মাস্টার ছিলেন তিনি বলতেন একটি ছাত্র আমার কাছে কাঁদা। এটা থেকে সুন্দর পুতুল বানানই আমার কাজ। এখন ভাবি স্যার সঠিক কোথায় বলতেন। শিশুকাল থেকে যদি গড়ে তোলা না যায় তবে পরে হয়া সম্ভব কস্টের।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ