“দা সার্চ”

মনির হোসেন মমি ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ০৪:৫৫:১২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি, বিবিধ ১০ মন্তব্য


কেনো জানি না ভাগ্য মনে হয় আমারি খারাপ।একে একে এ পর্যন্ত তিন চার বার পুলিশ আমাকে তল্লাসী করে কেবল বাবা খোজেঁ।প্রথম তিন দিন কিছুই বুঝিনি অনেকটা অবাকও হয়েছি এ আবার কোন বাবাকে খোজেঁ!ভাবলাম কত বাবাইতো দেশে বসবাস করেন,ভাইজভান্ডারী বাবা!,দয়াল বাবা!,পীর/ফকির বাবা,নিজের বাবা অন্যের বাবা কোন বাবাকে এরা খোজঁ করে?!প্রথম দু বার না বুঝলেও তৃতীয় বারে বুঝে গেছি আর মনে মনে হাসছি হায়রে আমাগো দেশের পুলিশ কোথায় অপরাধ আর কোথায় তার অপারেসনস!
-এই তুই হাসছিস কেনো?
এক পুলিশের এমন প্রশ্নে আমার মুখে যেন হাসি থামাতে পারছি না।পুলিশের বড় কর্তা সিনাটা টান করে সিনেমা স্টাইলে,তার নাক যেন আমার নাক বরাবর।
-এই৴জানিস আমি কে?আমাকে চিনিস?
-না ভাই চিনি না আর আপনাকে চিনে আমার কি লাভ?
-আমি থানা ওমুক বড় কর্তা।গোপালগঞ্জের…. তুই কি এ এলাকার?
-হ আমি লোকাল।
-বাসা কই?
-ঐতো এ রাস্তা দিয়ে হাটলে দশ মিনিট লাগবে।
দুজনের কথার মধ্যে অন্য ধান্দা বাজরা ধান্দা বাবা খোজঁছেন।এমন করে খোজঁছে যে আমার অন্ড কুষেই হাত দিয়ে বসল।
-ছি!ছি!এটা কোন ভদ্রতা?
আমি একটু রেগে গেলাম।
-এমন টানা হেচরাতো বাস কন্টেকদারেরা করে তার বাসে যাত্রী উঠাতে আপনারাতো পরিচয় দিলেন পুলিশ তা আপনারা এমন করছেন কেনো?
ওদের সার্চের সময় আমি ফলো করছি ওদের হাতগুলোতে।জানা মতে ওরা সার্চের নাম করে নিজেরাই নিষিদ্ধ দ্রব্য পকেটে ঢুকিয়ে অপরাধী বানায় নিরাপরাধী ব্যাক্তিদের অতপর হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।আমি হঠাৎ ঝারি দিয়ে একটু সরে এসে আমার সবগুলো পকেট থেকে মানি ব্যাগ সহ বের করে দিয়ে বললাম এবার খোঁজেন।তারা খোজাঁ শুরু করল আবার।তাদের সার্চ দেখে মনে হলো এ সার্চ কি আদৌ শেষ হবে!?আমাকে সার্চের এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললাম….আমি কি ন্যান্টো হব দাদা?
-আমাদের সার্চ করতে দিবেন না?
-করছেনতো আধ ঘন্টা লাগিয়ে…!
অন্য জনের নিশানা পড়ল পাশে রাখা আমার মানি ব্যাগের উপর।তার আগেই আমি মানি ব্যাগ হতে টাকাগুলো হাতের মুষ্টিতে নিয়ে ব্যাগটি আবার সেখানেই রাখলাম।সালার খচ্চর পুলিশ আমার মানি ব্যাগে ওদের বাবা আছে কি না খুজতেঁ খুজতেঁ মানি ব্যাগটি আমার ছিড়েই ফেলল।মেজাজ আমার চটে গেল।টাকা মুষ্টিবদ্ধ হাতটি উচিয়ে বললাম।
-এটা কি করলেন,মানি ব্যাগটা ছিড়ে ফেললেন?
সে তখন মুষ্টিবদ্ধ হাতটি খুলতে বলল।আমি মুষ্টি খুলতে সে হাতের টাকাগুলো তার হাতে নিয়ে নেরে চেরে দেখছেন।আমিতো অবাক!
-আরে ভাই টাকাতে কি মিসে আছে আপনাদের বাবা!
এর মধ্যে এলাকার লোকজন এক এক করে আসতে থাকে।এক এলাকার লোকেরা আমাকে চিনে তারা তাদের অবৈধ কাজের উপর প্রতিবাদ করা শুরু করল।রাষ্ট্রের সেবক বড় কর্তা রেগে গেল।
-আপনারা কি আমাদের কাজ করতে দিবেন না?
এলাকার এক মুরুব্বি বললেন,
-অবশ্যই সার্চ করবেন তবে এ ভাবে!এত ক্ষণ!আপনারা যখন ওকে ওর চলার পথে আটকান তখন থেকেই লক্ষ্য করছি।কি পেয়েছেন আপনারা?আপনারা আমাদের মত ভাল মানুষের রক্ষক না ভক্ষক?এই ছেলের নামে এলাকায় কোন খারাপ রিপোর্ট নেই।শিক্ষিত,প্রাইভেট জব করে,মাঝে মাঝে এলাকার সমস্যাগুলো পত্রিকা কিংবা অনলাইনে তুলে ধরেন।
আর যায় কোথায় মামুরা!এবার না হয় আমার পায়ে ধরা বাকী।সাংবাদিক! কেউ কেউ ওদের জম!কেউ বা আবার পরম বন্ধুর মতন।
বন্ধুরা উপরে বর্নিত কথাগুলো শুধু আমার নয় এ দেশের ষোল কোটি মানুষ নিয়ে চলমান বাংলাদেশের একটি নৈমর্ত্তীক ঘটনা।অনেকেই এমন ন্যাক্কার জনক পরিস্থিতিতে পড়েছেন অনেকে হয়েছেন সব হারিয়ে সর্বোশান্ত।আইন শৃংখলা বাহিনী দেশকে সন্ত্রাসীমুক্ত রাখতে অবশ্যই নজরধারী সার্চ করবেন তাতে একজন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি তা একমত কিন্তু গাছের গোড়া না কেটে গাছের আগা কাটলে তার ডালপালা গজাবে এটাইতো স্বাভাবিক।যা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়।
প্রতিটি স্বাধীন দেশেরই চারদিকে একটি বর্ডার থাকে যদি মাদকদ্রব্য ভিন দেশ হতে এ দেশে প্রবেশ করে তবে সরকারে বর্ডারের কর্ম কর্তাদের কর্মচারীদের সততা নিশ্চিত করে বর্ডাগুলো চেক দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।আর যদি ঐখানে গলদ থাকে তবে মিছে মিছে সেবক হয়ে কেনো ভক্ষক হবে এ দেশের আইন শৃংখলা বাহিনী?কেনোই বা জনগণের এমন বিরক্ত করা?।“সার্চ’এ যেন সরকারী অর্ডার নয় প্রশাসনের ভাবমুর্তি নষ্ট করা আর কিছু অসাধু পুশিলদের বাড়তি ইনকামের ব্যাবস্থ করা।

পুলিশী তল্লাশীর নিয়ম:
(y) পুলিশ যদি কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার মতো কোনও উপকরণ কিংবা মাদক আছে বলে মনে করে, সেক্ষেত্রে সিআরপিসি’র ১০৩ ও ১৬৫ ধারা অনুযায়ী তল্লাশি চালানোর আইনি অধিকার পুলিশের রয়েছে। তবে, তল্লাশির সময় কমপক্ষে দু’জন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে তল্লাশি চালাতে হবে।
(y) নিয়ম মেনে পুলিশ যাকে তল্লাশি করতে চাইবে, সেক্ষেত্রে পুলিশকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সহযোগিতা করতে আইনত বাধ্য। অন্যথায় সরকারি কাজে অসহযোগিতার অভিযোগে ৩৫৩ ধারায় ওই ব্যক্তিকে আটকের অধিকার রাখে পুলিশ।
ব্যাক্তি সার্চে কি আইন?
বর্তমানে আমাদের দেশে যেভাবে ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হয়,ফৌজদারি কার্য বিধিতে এ ধরনের তল্লাশির সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই।ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩(৪) ধারায় বলা হয়েছে,কার্য বিধি ১০২(৩) ধারা অনুসারে কোন ব্যক্তির দেহ তল্লাশি করা যাবে।ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে বস্তু সম্পর্কে তল্লাশি হওয়া উচিত,উক্ত স্থানে বা স্থানের নিকট কোন ব্যক্তি উক্ত বস্তু তাহার দেহে লুকাইয়া রাখেন।তবুও দুজন গণ্যমান্য ব্যাক্তি পাশে থাতে হবে।বর্তমানে রাস্তায় কিংবা পাড়া মহল্লায় মোটরসাইকেল বা গাড়ি আটকিয়ে জনগণকে যেভাবে তল্লাশি করা হয় তা আদতে কতটুকু আইনসিদ্ধ সেটি আমার জানা নেই। এই প্রক্রিয়ায় পুলিশি তল্লাশির ক্ষেত্রে বেড়ে গেছে দুর্নীতি এবং মারাত্মক ভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে মানবাধিকার।

বিঃদ্রঃ-অনেকেই বলেন,
পুলিশ পারেন না এমন কোন কাজ নেই আমি তা বিশ্বাস করি।

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ