জীবন যুদ্ধ ৭-ম পর্ব

রেজওয়ান ১৭ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:১০:৩৩পূর্বাহ্ন গল্প ১১ মন্তব্য


সারাদিন শুয়ে বসেই কেটে গেল। বিকেল বেলা বাইক কেনার জন্য এক লোক হাজির কিন্তু বাইক তো বিক্রয় হয়ে গেছে। লোকটি বললো শুনেছি পুরাটা দেয় নি ৩০ হাজার বাকি আছে আমি আর ও ২০ হাজার সহ ১লাখ ৭০ দিয়ে নিতে চাচ্ছিলাম আর পুরোটাই এখন দিবো।
না আংকেল আমি উনার টাকা টা নিয়েছিঃ উনি আসবে একটু পরেই কথা বলে উনার কাছ থেকেই নিয়ে যদি উনি দেন, আমি দিতে পাড়বো না।
আচ্ছা কি আর করা এই নিন ৩০ হাজার বাইকের চাবি দিন। সকালে যে এসেছিলো আমি ওর বাবা এই যে ছবি বলেই মোবাইল বের করে দেখালো।
বাইকের চাবি দিতে দিতে নাবিল জিজ্ঞাসা করলো তাহলে বেশি দিয়ে নিতে চাচ্ছিলেন কেন?
- আসার সময় শুনছি আপনি এই এলাকার দাদা! কিন্তু সৎ থাকার চেষ্টা করছেন তাই একটু পরীক্ষা করলাম কিছু মনে করবেন ন্স প্লিজ।
- মনে করতাম যদি নেজেকে পরিবর্তন করার চিন্তা না করতাম।
- আপনি ভাল মানুষ, চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়, এই নেন আমার কার্ড, রাখেন যদি কখনো দরকার হয় জানাবেন। যে কোনো দরকারে।
আচ্ছা বলে নাবিল কার্ড টা নিয়ে বাসায় চলে গেল। ইফতারের সময় হয়েছে। কালো পাঞ্জাবীটা ইস্ত্রী করে ওযু করে ডাইনিং রুমে এলো। সবাই টেবিলে আছে শুধু মা ছাড়া। নাবিল সোজা রান্না ঘরে ডুকে মা কে বললো কতক্ষন লাগবে তোমার? চলো চলো ইফতারের সময় হয়েছে।
এইতো হয়ে গেছে বাবা চল যাই বলেই বেগুনীর প্লেট টা নিয়ে মা ডাইনিং রুমে আসলেন। পিছে পিছে বিফ-আলুর চপের প্লেট টা নিয়ে নাবিল এসে বসলো। বাসাইয় অনেক মানুষ, কাকা-কাকি, ফুফা-ফুপি ও তাদের সন্তান সবাই আছে। ৫ মিনিটেই আজান দিয়ে দিলো। ইফতার শেষে নাবিল রেডি হয়ে মা’র হাতে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বললো রাখো বাইকের ১ লাখ ২০ হাজার স্কুলে দিয়ে দিছি ২০ তোমার কাছে রাখ বাকি টার কিছু অয়ন-তাজ কে দিতে হবে।
- আচ্ছা বাবা সাবধানে থাকিস বাবা। আর ফোন অফ করবি না ভুলে ও।
- ঠিক আছে মা আমি আসি, কালকে সকালে আসবো মা চিন্তা করো না বলেই বেরিয়ে গেলো মসজিদের উদ্দেশ্যে। মাগরীবের নামাজ শেষে নাবিল তাজ কে ফোন দিয়ে মসজিদে নিয়ে আসলো।
- তাজ এসেই বললো ভাই এত জরুরী তলব কোনো সমস্যা?
- না রে কোনো সমস্যা না ভাল লাগছে না তাই ডাকলাম। চল মাঠে যাই সিগারেট খাবো।
- আচ্ছা চলেন।
মাঠের পাসের দোকান থেকে ১ প্যাকেট বাঙলা ফাইভ নিয়ে মাঠে গিয়ে দাঁড়ালো নাবিল-তাজ।
সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে নাবিল বললো গাঁজা টা ছাড়ার চেষ্টা করছি গত ৩ দিন খাইনি। শরীর টা ম্যাজ ম্যাজ করছে।
- ভাল করেছেন ভাই, খুব খুশি হবো যদি ছেড়ে দিতে পারেন।
- মুচকি হেসে নাবিল তাজ কে ৪ হাজার টাকা দিইয়ে বললো নে এটা রাখ ঈদের সেলামি।
- না ভাই সেলামির দরকার নাই, এখন আপনার টাকাটা দরকার রেখে দেন ভাই।
- আরে বোকা আছে তো আমার কাছে।
- হুম্ম জানি জানি কত আছে আপনার কাছে। রেখে দেন তো ভাই।
- নাহ তুই রাখ লাগলে তো তদের কাছ থেকে ই নেবো তাই না ? চল চল মহরের দোকান থেকে নান আর নেহারী খেয়ে এশার নামাজ পড়বো তারপর মা কে ১ টা কল দিয়ে ১২ টা পর্যন্ত নামাজ পড়বো ফোন সাইলেন্ট করে।
- ভাই, বাবা ১০ টার আগে বাসায় যেতে বলছে আমি একটা কল দিয়ে বলে দেই আজকে আসবো না একটু দাড়ান।
- না তাজ বলার দরকার নেই এশার নামাজ পড়ে চলে যাস।
- এইটা কি বললেন ভাই? আপনি বাহিরে থাকবেন আর আমি বাসায় না ভাই তা হয় না।
- একদম চুপ, যা বলছি শোন। খাওয়া দাওা শেষে নামাজ পড়ে বাসায় জাবি বুঝলি?
- আচ্ছা ভাই কি আর করা ছোট ভাইকে সাথে রাখবেন না।
- চল পাগলা খেয়ে নেই। খুধা মিটে নাই ইফতারী করে।
খাওয়া শেষে করে নাবিল সিগারেট জ্বালিয়ে বিল দিয়েই বেরিয়ে এলো।
- তাজ যা তো ফোনে ৫০০ টাকা লোড দিয়ে আয়।
- আচ্ছা ভাই আপনে এখানে দাড়ান আমি ২ মিনিটে আসতেছি। বলেই চলে গেলো। হঠাৎ তাজ দৌড়ে এসে বললো ভাই চলেন তাড়াতাড়ি এখান থেকে...
- কি হয়েছে বলবি তো।
-চলেন এখান থেকে যেতে যেতে বলতেছি বলেই নাবিলের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।
- এখন বল কি হয়েছে?
- ভাই এশার নামাজ পড়ে চলেন দুই জনেই বাসায় চলে যাই। আজকে বাহিরে থাকার দরকার নাই।
- কেন! কি হয়েছে খুলে বল কি দেখছিস ?
- ভাই আপনার কাজিন আছে না কাঞ্চন তাকে দেখলাম হীরার সাথে কথা বলতেছে প্ল্যান করতেছে কি যেন। দূর থেকে ভালমত বুঝি নাই কিন্তু মনে হলো আপনাকে নিয়েই কথা বলেতেছে।
- দূর বোকা হয়তো ঈদের প্ল্যান করতেছে। তাছাড়া আমি তো আর গ্যাং নিয়ে কিছু বলি না। ক্লাবেও যাই না। সব তো ওরাই চালায় সো আমাকে কিছু করে লাভ কি ওদের? তাছাড়া যখন বাহিরের এলাকায় ছিলাম কেউ কিছু করার সাহস পাইনআই আর এটা তো আমার এলাকারে এখানে পোলাপান আমাকে মারার প্ল্যান করতেছে? চাইলে তো বাসায় আসার আগে ই মারতে পারতো, সুযোগ ও তো ছিলো তাই না?
- আমি ভাই এত কিছু বুঝি না। তারপরেও বলবো ভাল লাগতেছে না আমার।
- বের হওয়ার সময় মা ও এমন টা ই বললো! সমস্যা নাই আল্লাহ্‌ ভরসা বলেই মসজিদের দিকে হাটতে লাগলো দু’জনে।
এশার নামাজ ও তারাবীহ শেষে দু’জনেই বাইহিরে বেড়িয়ে এলো।
- তাজ চলে যা তুই। ভাল না লাগলে আমিও চলে যাবো একটু পরে।
- তাহলে ভাই আমিও একটু পরেই যাই, যদি মত পালটায় তাহলে দুই জনে এক সাথেই গেলাম।
- না তুই যা এমনেই দেড়ি হয়ে গেছে বলেই সিগারেট জ্বালালো নাবিল। তাজ চলে গেলে নাবিল মা’কে ফোন দিলো।
- মা কেমন আছো?
- এইতো! তুই এসে পর বাবা ভাল লাগতেছে না আমার।
- কি যে হয়েছে না তোমাদের!! আচ্ছা মা ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আসছি। ফোন কেটে সাইলেন্ট মুডে রেখে অযু করতে করতে চিন্তা করলো ২০ রাকাত নফল নামাজ পড়েই চলে যাবে। নামাজ শেষে বেরিয়ে এলো। সাথে সাথে ৪ জন ছেলে বেরিয়ে কাকে যেন কল দিয়ে বললো “হালায় বাইরইতেছে তরা রেডি থাক”
এই প্রথম নাবিলের কপাল কুচকালো। হচ্ছে কি এসব এখানে আর দেড়ি করা যাবে না বিপদ হতে। বাসার কাছেই মসজদ ১০ মিনিটেই পৌছে যাবে ভেবেই সিগারেট জ্বালিয়ে হাটতে হাটতে চিন্তা করলো পিছন থেকে ড াক দিলে দাঁড়ানো যাবে না। চিন্তা করতে করতেই পেছন থেকে ডাক এলো এই নাবিল শোন...
আরে এতো কাঞ্চনের কন্ঠ! শেষ পর্যন্ত তাজ আর মায়ের কথাই সত্যি হলো!! আর একটু এগুতেই হীরা পথ আটকালো।
- কই যাচ্ছিসরে ? মা’য়ের কোলে?
- ভাল মত কথা বল হীরা...পথ আটকালি কেন ? কিছু বলবি?
- নাহ কিচ্ছু কওয়ার সময় নাই। বলেই হীরা নাবিলের পেটে ছুরি বসিয়ে দিলো। পর পর ৩ টা স্টেপ দেওয়ার পরে সোহেল এলো নাবিলের কাছে কিরে ***র বাচ্চা তর না কত দেমাগ এত হ্যাডম কই গেল সব? তরে আজকে মাইরাই হালামু শালা বলেই পিস্তল দিয়ে নাবিলের মুখে-মাথায় এলো পাথারি বারি শুরু করলো। সেন্সলেস হয়ে নাবিল পরে ছিলো রাস্তার ধারে...

গল্পের সকল স্থান, নাম ও চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু গ্রাম-বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে অতি সাধারণ ঘটনা, কারো সাথে মিলে গেলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন”
চলবে...

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ